পরিবারের সদস্যদের আনার অনুমোদন

ফ্রান্সে বৈধ ইমিগ্র্যান্টরা পরিবার আনার সুযোগ পেলেও নির্দিষ্ট শর্ত মানতে হয়। এই নিবন্ধে জানুন কীভাবে তারা শর্ত পূরণ করে পরিবারকে ফ্রান্সে আনতে পারেন।

ফ্রান্সে বৈধভাবে বসবাসরত ইমিগ্র্যান্টরা তাদের পরিবারকে সেখানে আনার সুযোগ পান, তবে এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত এবং নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হয়। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে বৈধ ইমিগ্র্যান্টরা তাদের পরিবারকে ফ্রান্সে আনতে পারেন এবং এর জন্য কি ধরনের শর্ত পূরণ করতে হয়।

পরিবারের সদস্যদের আনার অনুমোদন

ফ্রান্সে কমপক্ষে ১৮ মাস ধরে বৈধভাবে বসবাসরত একজন বিদেশী ইমিগ্র্যান্ট শুধুমাত্র তার নিম্নোক্ত পরিবারের সদস্যদের আনার অনুমতি পাবেন:

  1. প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহিত জীবনসঙ্গী: ১৮ বছরের বেশি বয়সের স্বামী বা স্ত্রী। অবিবাহিত প্রেমিক-প্রেমিকা এবং তাদের সন্তানরা এই শর্তের আওতায় আসবেন না।
  2. অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান: ১৮ বছরের নিচে সন্তানেরা যারা বৈধ, প্রাকৃতিক, বা পালিত সন্তান হিসেবে বিবেচিত। স্বামী বা স্ত্রীর আগের সংসারের সন্তানেরাও আসতে পারে, যদি আগের স্বামী বা স্ত্রী মারা যান, পিতা-মাতার অধিকার হারান, অথবা বিদেশী আদালতের আদেশে সন্তানের পিতৃত্ব বা মাতৃত্বের অধিকার হারায়।

এই শর্তগুলো মূলত পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারিত, যা বিদেশী ইমিগ্র্যান্ট এবং তার পরিবারের মধ্যে বৈধ সম্পর্ক ও অভিভাবকত্ব নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

আবেদনের যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র

ফ্রান্সে পরিবারের সদস্যদের আনার জন্য আবেদনকারীর ন্যূনতম এক বছরের মেয়াদসহ একটি বৈধ টেম্পোরারি রেসিডেন্স কার্ড থাকতে হবে। এই কার্ডে নিচের উল্লেখ থাকতে পারে:

  • “salarié” (কর্মী)
  • “vie privée et familiale” (পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত জীবন)
  • “visiteur” (পরিদর্শক)
  • “commerçant” (ব্যবসায়ী)
  • “étudiant” (শিক্ষার্থী)
  • “profession artistique et culturelle” (শিল্প এবং সংস্কৃতি পেশা)

এছাড়া, ১০ বছরের জন্য বৈধ রেসিডেন্ট কার্ড (Carte de résident) বা দীর্ঘমেয়াদী ইউরোপীয় ইউনিয়নের “résident de longue durée – UE” কার্ডও উপযুক্ত। যদি কার্ড নবায়নের অপেক্ষায় থাকে, তাহলে সেই সময়কালের জন্য আবেদনপত্র জমা দেয়ার রিসিপ্ট থাকতে হবে।

অর্থনৈতিক শর্তসমূহ

ফ্রান্সে পরিবারের সদস্যদের আনার জন্য ইমিগ্র্যান্টের মাসিক আয় একটি নির্দিষ্ট সীমা পূরণ করতে হবে। এটি নিশ্চিত করে যে তারা ফ্রান্সে বসবাসের সময় আর্থিকভাবে স্থিতিশীল থাকবে।

  • ২-৩ জনের পরিবারের জন্য: মাসিক ন্যূনতম নগদ আয় (SMIC) প্রায় ১১৪৯.০৭ ইউরো হতে হবে।
  • ৪-৫ জনের পরিবারের জন্য: ন্যূনতম আয় প্রায় ১২৭২.০০ ইউরো।
  • ৬ বা তার অধিক সদস্যের পরিবারের জন্য: প্রায় ১৩৮৭.১৩ ইউরো।

আয় চাকুরী, ব্যবসা, সম্পদ থেকে আসতে পারে। তবে সরকারি ভাতা এবং দান-খয়রাত আয় হিসেবে বিবেচিত হবে না। যারা বিশেষ ভাতা (যেমন AAH বা ASI) পান, তাদের জন্য SMIC-এর সমান আয়ের প্রয়োজন নেই।

বাসস্থানের শর্তাবলী

প্রত্যেক আবেদনকারীকে নিশ্চিত করতে হবে যে তার বাসস্থানের আয়তন পরিবারের সদস্যদের বসবাসের জন্য যথেষ্ট হবে। ফ্রান্সে এটি অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে:

  • প্যারিস ও আশেপাশের অঞ্চল (Zone A, A bis): ৪ সদস্যের পরিবারের জন্য বাসার আয়তন ৪২ স্কয়ার মিটার।
  • Zone B1 এবং B2: একই ধরনের পরিবারের জন্য ৪৪ স্কয়ার মিটার।
  • Zone C: এর জন্য ৪৮ স্কয়ার মিটার।

৮ জনের অধিক সদস্যের জন্য প্রতিজন অতিরিক্ত ৫ স্কয়ার মিটার প্রয়োজন হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া

ফ্রান্সে পরিবার পুনর্মিলনের প্রক্রিয়াটি পাঁচটি ধাপে সম্পন্ন হয়:

১. আবেদন যাচাই প্রক্রিয়া

অফিস Français de l’immigration et de l’intégration (OFII)-তে আবেদন জমা দিয়ে নিবন্ধনের পর, তারা পরিবারের ভিসার প্রয়োজনীয় তথ্য প্রেরণ করে। OFII প্রিফেকচারে আবেদনকারীর বাড়ি ও আয়ের উপর তদন্ত পরিচালনা করে, যা কমিউন বা শহরের মেয়র কিংবা OFII থেকে করা হতে পারে।

২. সিদ্ধান্ত গ্রহণ

সম্পূর্ণ আবেদন ফাইল প্রাপ্তির ৬ মাসের মধ্যে প্রেফেকচার (Préfecture) সিদ্ধান্ত জানায়। প্রেফেকচার থেকে সিদ্ধান্তের কোনো সাড়া না আসলে, তা আবেদন প্রত্যাখ্যান বলে ধরা হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদনকারীরা আপিল করতে পারেন।

৩. ভিসা প্রদান

প্রিফেকচারের সিদ্ধান্ত অনুকূল হলে, পরিবারের সদস্যদের ভিসা প্রদান সংক্রান্ত ফাইল সংশ্লিষ্ট ফ্রান্স দূতাবাসে প্রেরণ করা হয়। পরিবারের সদস্যদের সর্বাধিক তিন মাসের মধ্যে ফ্রান্সে প্রবেশ করতে হবে।

৪. প্রাথমিক অভ্যর্থনা (কিছু দেশের জন্য)

ফ্রান্সে OFII এর অফিস আছে এমন কিছু দেশের জন্য প্রাথমিক অভ্যর্থনা প্রক্রিয়া থাকে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়।

৫. বসবাসের অনুমতি প্রদান

ফ্রান্সে পৌঁছানোর পর আবেদনকারীর স্ত্রীর জন্য বসবাসের অনুমতি প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হয়। আফ্রিকার কিছু দেশ এবং বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের জন্য বসবাসের শর্তাবলী ভিন্ন হয়। বাংলাদেশের জন্য সাধারণত উল্লেখিত আইনের ভিত্তিতে বসবাসের অনুমতি প্রদান করা হয়।

আইনি সহায়তা ও পরামর্শ

ফ্রান্সের পরিবার পুনর্মিলন প্রক্রিয়া যথেষ্ট জটিল হতে পারে। আবেদনকারীরা প্রয়োজন হলে আইনি সহায়তা নিতে পারেন। বিভিন্ন অভিবাসন সংস্থা যেমন “La Cimade” এবং “France Terre d’Asile” ফ্রান্সে পরিবার পুনর্মিলনের ব্যাপারে অভিবাসীদের জন্য পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করে।

কিছু প্রয়োজনীয় তথ্যসূত্র

  1. ফ্রান্সের অভিবাসন আইন – ফ্রান্স সরকার পরিবার পুনর্মিলন বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু আইন তৈরি করেছে যা মূলত অভিবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে। যেমন, “Code de l’entrée et du séjour des étrangers et du droit d’asile” (CESEDA) নামক আইন।
  2. OFII-এর রিসোর্স ও গাইডলাইন – অফিস Français de l’immigration et de l’intégration (OFII) ওয়েবসাইটে পরিবার পুনর্মিলনের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও গাইডলাইন প্রকাশ করে।
  3. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন – অভিবাসনের প্রক্রিয়ার আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব সম্পর্কিত তথ্য।

এই নিয়মাবলী ও শর্তগুলো অভিবাসন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং ফ্রান্সে পরিবার পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে বৈধ ইমিগ্র্যান্টদের সচেতন থাকা প্রয়োজন।

পোস্ট শেয়ার করুন:

এই সম্পর্কিত পোস্ট

ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় ও অভিবাসন বিষয়ে উকিলের তথ্য

এই তথ্য কৃতজ্ঞতাসহ “ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় ও অভিবাসন” থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এখানে ১৯ জন উকিলের যোগাযোগের বিস্তারিত এবং তাদের

আরও পড়ুন

আমার রিফুজি আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়েছে, ফ্রান্সে অবৈধভাবে অবস্থান করছি: আমার সামাজিক অধিকারগুলো কী?

চিকিৎসা সহায়তা (AME) আপনার রিফুজি আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে এবং আশ্রয় প্রক্রিয়ার সময় যদি আপনার কাছে সলিডারিটি কমপ্লিমেন্টারি ইন্স্যুরেন্স (CSS) থাকে,

আরও পড়ুন

ফ্রান্সে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের যাত্রা: একটি বিশ্লেষণ

বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের ফ্রান্সে যাত্রা একটি জটিল বিষয়, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতির পাশাপাশি ফ্রান্সের অভিবাসন নীতির পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত

আরও পড়ুন

এসাইলামের আবেদন লিখুন!

আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে দ্রুত, সহজ এবং নির্ভুল আবেদন তৈরি করুন। আপনার আবেদনটি তৈরি করতে আমাদের টুলে ক্লিক করুন!